ইমরান হোসেন ইমন, ধুনট প্রতিনিধি) : বগুড়া-৫ আসনে কে পাচ্ছেন নৌকা-ধানের শীষ? দেশের বড় দুই দলের দলীয় মনোনয়ন নিয়ে এখন সর্বস্তরে চলছে নানা ধরনের জল্পনা-কল্পনা। সাধারন ভোটার সহ সাধারন মানুষের মুখে মুখে চলছে নির্বাচনী আলাপ।
শহর ও গ্রামগঞ্জের চা স্টলগুলো এখন নির্বাচনী টক শোতে পরিনত হয়েছে। জানাগেছে, একসময় বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত ছিল শেরপুর ও ধুনট উপজেলা নিয়ে গঠিত বগুড়া-৫ আসন।
কিন্তু ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনটি আওয়ামী লীগের দখলে চলে যায়। এছাড়া ২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নেয়ায় বিনা ভোটে আবারও আওয়ামীলীগের দখলে থাকে এ আসনটি।
তাই পরপর দুইবার এ আসনটি দখলে থাকায় বিএনপির ঘাঁটিতে শক্ত অবস্থানে রয়েছে আওয়ামীলীগ। আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ডগুলোই এখনও বিএনপির ঘাঁটিতে বড় ফ্যাক্টর হয়ে দাড়িয়েছে। তাই এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবারও বিজয়ী হবে বলে নেতাকর্মীরা আশাবাদি।
এদিকে, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের জন্মভূমি খ্যাত বগুড়া জেলার প্রায় সব কয়টি আসনই ছিল বিএনপির ঘাঁটি। কিন্তু নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বগুড়া-১ ও বগুড়া-৫ এই দুইটি আসনই আওয়ামীলীগের দখলে চলে যায়।
তন্মধ্যে বগুড়া-৫ (শেরপুর-ধুনট) আসনটি ছিল অতি গুরুত্বপর্ণ। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশ গ্রহন না করায় আবারও এ আসনটি আওয়ামীলীগের দখলে থাকে। তাই এবার একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনটি পুনরুদ্ধারে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বিএনপি।
অপরদিকে এ আসনে আওয়ামীলীগ ও বিএনপির পাশাপাশি রাজনৈতিক নির্বাচনী মাঠে রয়েছে জাতীয়পার্টি ও জামায়াত। আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে যারা দলীয় মনোয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন তারা হলেন, আওয়ামীলীগের বর্তমান সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব হাবিবর রহমান, বগুড়া জেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক মজিবর রহমান মজনু, ধুনট উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি অধ্যাপক টিআইএম নূরুন্নবী তারিক, বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবি পরিষদের সাধারন সম্পাদক জান্নাতুল ফেরদৌসী রুপা, শেরপুর উপজেলা যুবলীগের সাবেক যুগ্ন আহবায়ক এমএ হান্নান ও শেরপুর শহর মহিলা আওয়ামীলীগের সভাপতি তাহমিনা জামান হিমিকা।
অপরদিকে বিএনপির দলীয় মনোনয়নপত্র সংগ্রহকারীদের মধ্যে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তারা হলেন, বগুড়া জেলা বিএনপির উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য জানে আলম খোকা, বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ, জেলা বিএনপির যুগ্ন সাধারন সম্পাদক ও ধুনট উপজেলা চেয়ারম্যান তৌহিদুল আলম মামুন, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এসএম শফিউজ্জামান খোকন ও মাহবুবুর রহমান হারেজ।
এছাড়া জাতীয়পার্টি থেকে কেন্দ্রীয় জাতীয়পার্টির নির্বাহী কমিটির সদস্য সাবেক জজ এ্যড. তাজ মোহাম্মদ ও সাবেক সংসদ সদস্য এ্যাড. শাহজাহান আলীও দলীয় মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। নির্বাচনী মাঠে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীদের অবস্থান: নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী জেলা বিএনপির উপদেষ্টা জানে আলম খোকাকে বিপুল ভোটে পরাজিত করে এই আসনে আওয়ামীলীগের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন ধুনটের সন্তান সাবেক পুলিশ সুপার বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব হাবিবর রহমান।
নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই এলাকায় বেশিরভাগ সময় ব্যয় করেছেন তিনি। পরপর দুইবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ায় ধুনট ও শেরপুর উপজেলায় অনেক ব্রীজ, কালভার্ট, রাস্তা-ঘাট, বিদ্যুৎ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সহ বিভিন্ন সেক্টেরে অভূতপূর্ব উন্নয়ন করেছেন তিনি। তৃনমূল আওয়ামী লীগকে সু-সংগঠিত করতেও তিনি অসাধারন অবদান রেখেছেন।
একারনে বিগত দিনের চেয়ে বর্তমানে ধুনট-শেরপুর উপজেলায় আওয়ামী লীগের ভীত আরো মজবুত হয়েছে বলে তিনি দাবি করেছেন। তাই তিনি আশাবাদী এবারও দলীয় মনোনয়ন পাবেন। তাই দলীয় মনোনয়ন পেলে আবারও বিপুল ভোটে নৌকার বিজয় নিশ্চিত হবে বলে তিনি জানান।
এছাড়া আওয়ামী লীগের অপর সম্ভাব্য প্রার্থী জেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক মজিবর রহমান মজনু। তিনিও ধুনট ও শেরপুর উপজেলা আওয়ামীলীগকে সু-সংগঠনিক করতে কাজ করে যাচ্ছেন। দলের দুসময়ে তিনি অসাধারন অবদান রেখেছেন। তিনি নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন।
তবে সংসদ নির্বাচনের মনোনয়ন না পেয়ে তিনি ২০১৪ সালে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন নিয়ে শেরপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নেন। কিন্তু জামায়াতের প্রার্থী দবিবর রহমানের কাছে ৩৭ হাজার ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হন তিনি। এরপর থেকেই তিনি নির্বাচনী মাঠ গোছাতে ব্যস্ত রয়েছেন। তাই তাকেই দলীয় মনোনয়ন দেয়া হবে বলে তিনি আশাবাদী।
এছাড়া ধুনট উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যাপক টিআইএম নূরুন্নবী তারিকও নির্বাচনী মাঠ গোছাতে ব্যস্ত রয়েছেন। এলাকায় বিভিন্ন সভা সমাবেশে আওয়ামীলীগ সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ড জনসাধারনের কাছে তুলে ধরে গণসংযোগ করছেন।
তাছাড়া আওয়ামী লীগের আরেক প্রার্থী ধুনটের সন্তান বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবি পরিষদের সাধারন সম্পাদক জান্নাতুল ফেরদৌসী রুপা। তিনিও আওয়ামীলীগ সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ড জনসাধারনের কাছে তুলে ধরে গণসংযোগ করছেন।
নির্বাচনী মাঠে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীদের অবস্থান: নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংস্কার পস্থী হওয়ায় সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম মোহাম্মদ সিরাজকে বাদ দিয়ে দলীয় মনোনয়ন পান বগুড়া জেলা বিএনপির উপদেষ্টা ও শেরপুর উপজেলা বিএনপির আহবায়ক জানে আলম খোকা। কিন্তু তিনি আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য হাবিবর রহমানের কাছে পরাজিত হন। এরপর থেকেই তিনি এলাকায় নির্বাচনী মাঠে সক্রীয় রয়েছেন।
দলের নেতাকর্মীদেরকে আগলে রেখে তিনি দলকে সুসংগঠিত করছেন। তাই দল তাকেই মনোনয়ন দিবেন বলে তিনি আশাবাদী। অপর প্রার্থী হিসেবে বগুড়া জেলা বিএনপির যুগ্ন সাধারন সম্পাদক ও ধুনট উপজেলা বিএনপির আহবায়ক তৌহিদুল আলম মামুনও নির্বাচনী মাঠে সক্রীয় রয়েছেন।
তিনি ২০১৪ সালে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীকে বিপুল ভোটে পরাজিত করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে ধুনট উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি এবার সংসদ নির্বাচনের জন্য মাঠ গোছাতে ব্যস্ত রয়েছেন।
এলাকায় বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড করে নিজের অবস্থান তৈরী করেছেন। এছাড়া এক সময়কার সংস্কারপন্থী নেতা হিসেবে পরিচিতি পেলেও বিএনপির তিন বারের সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ বর্তমানে দলে ভীরেছেন। তিনিও এবার দলের শক্তিশালী প্রার্থী। তিনিও এলাকায় তার পুরনো নির্বাচনী আমেজ তৈরীতে ব্যস্ত রয়েছেন।
তিনি আশাবাদী তিনি এবার দলীয় মনোনয়ন পাবেন। তাই দলীয় মনোনয়ন পেলে বিএনপির হারানো আসনটি পুনরুদ্ধার হবে বলে তিনি দাবি করেছেন। এদিকে সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ধুনট ও শেরপুর উপজেলায় সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। ধুনট উপজেলায় ৮৭টি ভোট কেন্দ্রের ৪১৯টি বুথে ভোট গ্রহন অনুষ্ঠিত হবে।
এই উপজেলায় মোট ভোটার রয়েছে ২ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৮ হাজার ৫৪৩ জন ও মহিলা ভোটার রয়েছে ১ লাখ ১২ হাজার ৬৩৬ জন। এছাড়া শেরপুর উপজেলায় ৯২টি ভোট কেন্দ্রে ভোগ গ্রহন অনুষ্ঠিত হবে। এই উপজেলায় মোট ভোটার ২ লাখ ৫৩ হাজার ৮৪৮ জন।
এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ২৩ হাজার ৭১৫ জন এবং মহিলা ভোটার ১ লাখ ৩০ হাজার ১৩৩জন। ধুনট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাজিয়া সুলতানা বলেন, আসন্ন সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে সকল ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। ইতিমধ্যে একজন ম্যাজিষ্ট্রেট নিয়োগ করা হয়েছে। নির্বাচনের আগমূহুর্তে সেনাবাহিনী, র্যাব, বিজিবি ও পুলিশ সহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীরা সদস্যরা মোতায়েন থাকবে।