ইমরান হোসেন ইমন, ধুনট (বগুড়া) থেকে:একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বগুড়া-৫ (শেরপুর-ধুনট) আসনে আওয়ামীলীগের বর্তমান এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব হাবিবর রহমান ও বিএনপির সাবেক এমপি আলহাজ্ব গোলাম মোহাম্মদ সিরাজের ভোট যুদ্ধ শুরু হতে যাচ্ছে।
৩০ ডিসেম্বর এ নির্বাচনে দেশের বড় দুই দল আওয়ামীলীগের নৌকা ও বিএনপির ধানের শীষের ভোট যুদ্ধে কে জয়ী হবেন তা নিয়েই এখন জনসাধারনের মাঝে চলছে নানা ধরনের জল্পনা-কল্পনা ও হিসাব নিকাশ। তবে নির্বাচন নিয়ে দুই দলেই কিছুটা কোন্দল ও অভিমান থাকলেও বিএনপিতে কোন্দল চরমে পৌঁছেছে।
জানাগেছে, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের জন্মভূমি খ্যাত বগুড়া-৫ আসনটি এক সময় বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত ছিল। শেরপুর উপজেলার একটি পৌরসভা ও ১০টি ইউনিয়ন এবং ধুনট উপজেলার একটি পৌরসভা ও ১০টি ইউনিয়ন নিয়ে এই আসনটি গঠিত। এই আসনের বর্তমান ভোটার রয়েছেন ৪ লাখ ৭৫ হাজার ২৭ জন।
নির্বাচন অফিসসূত্রে জানাগেছে, স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ সালের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনে আওয়ামীলীগের প্রার্থী সাংবাদিক আমানউল্লাহ্ খান নির্বাচিত হন। এরপর ১৯৭৯ সালে বিএনপির প্রার্থী এ্যাডভোকেট হাবিবুর রহমান, ১৯৮৬ সালে আওয়ামীলীগের প্রার্থী ফেরদৌস জামান মুকুল, ১৯৮৮ সালে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এ্যাডভোকেট শাহজাহান আলী তালুকদার নির্বাচিত হন।
এছাড়া ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারী, ১৯৯৬ সালের শেষের দিকে এবং ২০০১ সালের নির্বাচনে পর পর চার দফায় বিএনপির প্রার্থী শেরপুরের সন্তান গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ এমপি নির্বাচিত হন। কিন্তু ২০০৮ নির্বাচনের আগে সংস্কারপস্থী নেতা হিসাবে পরিচিতি পাওয়ায় গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ রাজনীতি থেকে দূরে সরে যান।
পরবর্তীতে জানে আলম খোকা বিএনপির দলীয় মনোনয়ন পান। ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী জানে আলম খোকাকে পরাজিত করে ধুনটের সন্তান সাবেক পুলিশ সুপার বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব হাবিবর রহমান এমপি নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিএনপি নির্বাচনে অংশ গ্রহন না করায় আবারও হাবিবর রহমান বিনা প্রতিদন্দ্বিতায় এমপি নির্বাচিত হন।
এদিকে পরপর দুইবার এই আসনটি দখলে থাকায় বিএনপির ঘাঁটিতে শক্ত অবস্থান তৈরী করে আওয়ামীলীগ। গত দশ বছরে এলাকার অনেক উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড করে এখনও আওয়ামীলীগের জনপ্রিয়তা সর্বত্র রয়েছে বলে দাবি করছে নেতাকর্মীরা।
আওয়ামীলীগের বর্তমান এমপি মুক্তিযোদ্ধা হাবিবর রহমান বলেন, স্বাধীনতার পর ধুনট-শেরপুর এলাকায় যে উন্নয়ন কোন সরকার করতে পারেনি। সেই উন্নয়ন আওয়ামীলীগ সরকারের একজন এমপি হয়ে আমি করতে পেরেছি। আগামীতে আবারও এমপি নির্বাচিত হলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ি গ্রামকে শহরে পরিনত করব। তাই আসন্ন এই নির্বাচনে আবারও নৌকার বিজয় হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
এদিকে বিএনপির চার বারের সাবেক এমপি গোলাম মোহাম্মদ সিরাজেরও রয়েছে পুরানো জনপ্রিয়তা। কিন্তু তিনি দীর্ঘদিন এলাকায় না থাকায় বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী জানে আলম খোকার সাথে রাজনৈতিক বিরোধ চরমে পৌছেছে। জানে আলম খোকার পক্ষে শেরপুর ও ধুনট উপজেলার শীর্ষ স্থানীয় নেতারা অবস্থান নিয়েছে।
সংবাদপত্রের মাধ্যমেও সাবেক এমপি গোলাম মোহাম্মদ সিরাজকে অবাঞ্চিতও ঘোষনা করেন জানে আলম খোকার সমর্থিত নেতাকর্মীরা। এভাবেই হেভিওয়েট দুই নেতার কোন্দন প্রকোশ্যে রুপ নেয়। তাই ওই দুই নেতার সমঝোতা না হলে এই আসনটি আবারও হাত ছাড়া হতে পারে বলে বিএনপির তৃণমূলের নেতাকর্মীরা আশংকা করেছেন।
বগুড়া জেলা বিএনপির উপদেষ্টা ও শেরপুর উপজেলা বিএনপির আহবায়ক জানে আলম খোকা বলেন, দল যাকে ধানের শীষ প্রতীক দিয়েছেন নেতাকর্মীরা তার পক্ষেই নির্বাচনী কাজ করছে। তবে দলীয় কোন্দল সমঝোতা করতে বিএনপির প্রার্থী গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ কোন উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন কিনা এপ্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখনও তার (জানে আলম খোকা) সাথে কেউ যোগাযোগ করেনি। তবে যোগাযোগ না করলেও তিনি ধানের শীষের পক্ষেই কাজ করবেন।
এবিষয়ে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী সাবেক এমপি গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ বলেন, দলের মধ্যে কোন কোন্দাল নেই। তাই সাবাইকে সাথে নিয়েই ধানের শীষের পক্ষে কাজ করব এবং বিজয় নিশ্চিত হবে।