সরকারের পদত্যাগ আর নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ সাত দফা দাবিকে সামনে রেখেই আগামী একাদশতম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যাচ্ছে বিএনপি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট।
শনিবার রাতে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে জোটটির শীর্ষ নেতারা বৈঠক করে এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে সংশ্লিষ্ট বেশ কয়েকটি সূত্রে জানা গেছে। তবে এই বিষয়ে ঐক্যফ্রন্টের কোনো নেতাই বক্তব্য রাখতে রাজি হননি।
জোটের অন্যতম একজন শীর্ষ নেতা জানিয়েছেন, আন্দোলনের অংশ হিসেবেই নির্বাচনে অংশ নিতে যাচ্ছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। তবে জোটটি তার সাত দফা দাবি থেকে সরে আসেনি। শেষ সময় পর্ন্ত সাত দফা দাবি নিয়ে মাঠে থাকার কথা জানান তিনি।
জোটের আরেক শীর্ষ নেতা বলেন, ‘আমরা মনে করেছি, নির্বাচনে যাওয়াই সঠিক সিদ্ধান্ত। তবে নির্বাচনে না গিয়ে বিকল্প নিয়েও আলোচনা হয়েছে। আমরা কৌশলের অংশ হিসেবে নির্বাচনে যাচ্ছি।’ এদিকে একাদশতম জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অবস্থান জানাতে রোববার দুপুর ১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করবেন জোটের নেতারা। জোটের অন্যতম নেতা ড. কামাল হোসেন ঐক্যফ্রন্টের পক্ষে জোটের সিদ্ধান্তের কথা জানাবেন।
শনিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের বিএনপির মহাসচিব ও জোটটির মুখপাত্র মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আজ সন্ধ্যা থেকে বিএনপি, ২০ দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের বৈঠক হয়েছে। দীর্ঘ সময় আলোচনা হয়েছে। আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে আগামীকাল দুপুর ১টায় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে ড. কামাল হোসেন ঐক্যফ্রন্টের অবস্থান জানাবেন।’
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের বৈঠকের বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মিত্রদলগুলোর প্রধানদের মতামত জানতে চান। বৈঠকে উপস্থিত গণফোরাম, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, নাগরিক ঐক্যের শীর্ষ নেতারা তাদের মতামত দেন। পক্ষে বিপক্ষে মতামত ও যুক্তি আসে। তবে নির্বাচনে যাওয়ার পক্ষে মতামত ও যুক্তি গ্রহণযোগ্য হওয়ায় নেতারা নির্বাচনে যাওয়ার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেন।
এর আগে পুরোনো শরীকদলের শীর্ষ নেতাদের নিয়ে বৈঠক করেন সদ্য ২০ দল থেকে ২৩ দলে রূপ নেওয়া বিএনপি জোট। সেখানে জোটের প্রধান শরীক জামায়াতে ইসলামী সিদ্ধান্ত জানাতে একদিন সময় নেয়। অন্যদিকে জোটের একটি অংশ মনে করেন নির্বাচনে যাওয়া আত্মঘাতী হবে। কারণ এই সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। তারা নির্বাচনে অংশ নেওয়ার পরিবর্তে আন্দোলনের কথা বলেন। তবে শরীকদলগুলোর আর একটি অংশ নির্বাচনের পক্ষে মত দেন।
তাদের দাবি, এবার নির্বাচনে অংশ না নিলে এবং আন্দোলন করে দাবি আদায় না হলে তা জোট ও বিএনপির জন্য বড় ধরনের ক্ষতি ডেকে আনবে। সেক্ষেত্রে এই ধরনের ঝুঁকি নেওয়া কতটা ঠিক হবে তাও মনে করিয়ে দেন তারা। এর আগে বিকেল সোয়া ৫টার দিকে নির্বাচনে অংশ নেওয়া না নেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে ডাকা বৈঠকের আগেই দ্বিধা বিভক্ত হয়ে পড়েন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যরা। দু’তিনজন সদস্য কোনোভাবেই খালেদা জিয়াকে ছাড়া নির্বাচনে যেতে চান না। সোয়া ৫টায় বেঠক শুরু হলেও সেই বৈঠকে যোগ দেননি বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। পরে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে কার্যালয়ে আসেন তিনি।
তিনি শুরু থেকেই এই সরকারের অধীনে এবং খালেদা জিয়া ছাড়া নির্বাচনে না যাওয়ার কথা বলে আসছেন। তার সঙ্গে আরো দু’জন নেতাও নির্বাচন যেতে চান না। তবে স্থায়ী কমিটির বেশিরভাগ সদস্য মনে করেন নির্বাচন থেকে দূরে সরে আন্দোলনে নামলে তা দলের জন্য আরো বড় ক্ষতি হবে। বরং নির্বাচনে যাওয়ার মাধ্যমেই দাবি স্বপক্ষে আন্দোলন চালিয়ে নেওয়ার কথা বলেন তারা। তবে বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্রের দাবি, নির্বাচনে যাওয়ার বিষয়ে কারান্তরীণ বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও লন্ডনে অবস্থান করা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সবুজ সংকেত দিয়েছেন।
আরো খবর পড়ুনঃ>>