সাইবার অপরাধ দমনে বগুড়ায় জেলা পুলিশের উদ্যোগে গঠিত সাইবার পুলিশ ইউনিট (সিপিবি) আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করেছে। পুলিশের রাজশাহী রেঞ্জের উপ-মহাপরিদর্শক এম খুরশীদ হোসেন বৃহস্পতিবার দুপুরে বগুড়া পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে ওই ইউনিটের উদ্বোধন করেন।
ভিডিও দেখুন :
ভিডিও দেখুন :
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানো জানানো হয়, ফেসবুক, ইন্সট্রাগ্রাম ও টুইটার-এর মত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আপত্তিকর ব্যক্তিগত ছবি বা মিথ্যা তথ্য ও গুজব ছড়ানোসহ মোট ২১ ধরনের অপরাধকে সাইবার অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। জেলার পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভূঞা সাইবার পুলিশ বগুড়া (সিপিবি) ইউনিটের প্রধানের দায়িত্ব পালন করছেন। তার নেতৃত্বে ১২ সদস্যের একটি টিম ওই ইউনিটের কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বগুড়ার পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভূঞা জানান, প্রায় পাঁচ মাস আগে ২০১৮ সালের ১৪ আগস্ট ‘সাইবার পুলিশ বগুড়া’ নামে একটি ফেসবুক পেইজের মাধ্যমে জেলায় সাইবার অপরাধের উপর প্রথম কার্যক্রম শুরু করা হয়। তখন থেকে এ পর্যন্ত মোট ৩৮টি অভিযোগ পাওয়া যায়। যার মধ্যে ১৯টি অভিযোগ নিষ্পত্তি করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘কেউ যদি সাইবার অপরাধের শিকার হন তাহলে তাকে সংশ্লিষ্ট থানায় অভিযোগ, সাধারণ ডায়েরি বা মামলা করতে হবে। পরে সেই অভিযোগের কপি বগুড়া পুলিশ সুপার কার্যালয়ে অবস্থিত সিপিবি ইউনিটে জমা দিতে হবে।’
সিপিবি’র পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ফেসবুক সংক্রান্ত অভিযোগের ক্ষেত্রে সাধারণ ডায়েরি বা মামলায় ফেসবুক আইডির ইউআরএল লিঙ্ক ও নিউমেরিক ভ্যালু অবশ্যই উল্লেখ করতে হবে। পাশাপাশি অপরাধ সংশ্লিষ্ট পেইজের স্ক্রিনশর্ট সংযুক্ত করতে হবে। তাছাড়া কোন আপত্তিকর ছবি বা ভিডিও থাকলে তার কপি এবং লিঙ্ক সংযুক্ত করতে হবে।
বগুড়ায় পুলিশের সাইবার ইউনিটের উদ্বোধন করে উপ-মহাপরিদর্শক এম খুরশীদ হোসেন বলেন, ডিজিটাল যুগে প্রবেশের পর থেকেই সাইবার অপরাধ বাড়তে শুরু করেছে। যার প্রধান শিকার হচ্ছেন নারীরা। তিনি বলেন, পুলিশের রাজশাহী রেঞ্জের অধীন অন্যান্য জেলাতে সাইবার ইউনিট গঠিত হলেও বগুড়ার পুলিশ সবচেয়ে সক্রিয়। আশা করছি তারা সাইবার অপরাধ দমনে আরও সফল হবে এবং এর মাধ্যমে প্রতিটি মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সক্ষম হবে।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে সদ্য পদোন্নতিপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার আরিফুর রহমান মণ্ডল, মোকবুল হোসেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গাজিউর রহমানসহ উর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
যে ২১টি কর্মকাণ্ডকে সাইবার অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে সেগুলো হলো-
১. আপত্তিকর ব্যক্তিগত ছবি বা ভিডিও, মিথ্যা তথ্য, বিভিন্ন ধরণের গুজব ইত্যাতি ফেসবুক, ইন্সট্রাগ্রাম ও টুইটারের মত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়ানো।
২. ওয়েব ফিশিং বা অন্য কোন উপায়ে তথ্য চুরি করে ফেসবুক বা ই-মেইল অ্যাকাউন্ট হ্যাকের মাধ্যমে জিম্মি করে অবৈধ সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা।
৩. হ্যাকিং-এর মাধ্যমে কোন ব্যক্তি বা সংগঠিত দল কর্তৃক কোনো ব্যক্তি বা পরিবারকে ভীতি বা শক্তি প্রদর্শন, হুমকি প্রদান ও তথ্য ছিনতাই সংক্রান্ত অপরাধ।
৪. সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস ও ভুয়া প্রশ্ন তৈরি করে অর্থ হাতিয়ে নেওয়া।
৫. সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও ব্লগের মাধ্যমে জঙ্গিবাদসহ ধর্মীয় উগ্র মতবাদ প্রচারণা এবং সমর্থক সদস্য সংগ্রহ করা।
৬. ইউটিউবে আপত্তিকর ও অশালীন খারাপ ভিডিও প্রচার করা।
৭. বিভিন্ন ধরনের পর্ণো ভিডিও তৈরি করে বিভিন্ন পর্ণো সােইটে প্রচার করা।
৮. ইন্টারনেটের মাধ্যমে শিশু পর্ণোগ্রাফি প্রচার।
৯. অবৈধ, অশ্লীল, ধর্মীয় অবমাননা হয় এমন কোন কনটেন্ট প্রকাশ বা প্রচার করা।
১০. সরকার বিরোধী কোন গুজব ছড়িয়ে জনমনে ভীতির সঞ্চার করা।
১১. ভূয়া অনলাইন পত্রিকার মাধ্যমে মিথ্যা সংবাদ প্রচার ও গুজব ছড়ানো।
১২. বিকাশ বা রকেট-এর মত মোবাইল ব্যাংকিং এর মেবায় প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে নেওয়া।
১৩. মোবাইল ফোন নম্বর ক্লোন করে চাঁদাবাজি করা।
১৪. মোবাইল ফোনে বিভিন্ন লটারী বা পুরষ্কারের লোভ দেখিয়ে আর্থিক প্রতারণা।
১৫. অনলাইনে আর্থিক প্রতারণা করা।
১৬. পাসওয়ার্ড হাতিয়ে নিয়ে এটিএম কার্ড ও পিওএস জালিয়াতির মাধ্যমে আর্থিক প্রতারণা
১৭. অনলাইন গ্যাম্বলিং এবং ক্রিপ্টো কারেন্সি সংক্রান্ত অপরাধ।
১৮. সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে মাদক বিক্রি করা।
১৯. ভূয়া বা মিথ্যা ই-মেইল প্রেরণের মাধ্যমে প্রতারণা।
২০. ভাইরাসের মাধ্যমে কম্পিউটারের নেটওয়ার্ক সিস্টেমের ক্ষতি সাধন করা।
২১. পাইরেসির মাধ্যমে ‘ইন্টেলেকচুয়াল প্রোপার্টির ক্ষতি সাধন।
No comments:
Post a Comment