Monday, January 28, 2019

এক ঘর পালানো কন্যা ও তার বাবার গল্প


বগুড়া উত্তর ডটকম: ২৬ জানুয়ারি রাত দশটা। নিজ অফিসে বসে দাপ্তরিক কাজকর্ম সারছিলেন বগুড়া সদর সার্কেল এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সনাতন চক্রবর্তী। তার মুখে শোনা কথো গুলোই এখানে তুলে ধরা হলো, এমন সময় অফিসে এলো ছোটভাই সাংবাদিক নৃত্যশিল্পী সজল   এবং পরিচিত আরেক ভদ্রলোক হামিদ ভাই। তাদের সাথে এক ভদ্রলোক একজন ভদ্রমহিলা এবং একটি বোরকাচ্ছাদিত বালিকা। বয়স ১৩/১৪ । 

সজলকে জিজ্ঞাসা করলাম ঘটনা কি? তখন সাথের লোকটি কথা বলা শুরু করলেন। তার ভাষ্যমতে তার নাম মোঃ সৌখিন মিয়া। তিনি বগুড়া ময়মনসিংহ রুটের যুগান্তর বাসের একজন সুপারভাইজার। বাড়ি বগুড়া সদরের নুনগোলা ইউনিয়নে। 

গত ১৭ তারিখে তার বাস ময়মনসিংহ থেকে ছাড়ার সময় এই মেয়েটি উঠেছিল পাবনা যাবার নাম করে। মেয়েটির হাটিকুমরুল চাররাস্তা (সিরাজগঞ্জ রোড) মোড়ে নামার কথা ছিল। আসার পথে এলেঙ্গা এবং অন্যান্য এলাকায় যানজটের কারনে গাড়ি সিরাজগঞ্জ রোডে আসতে রাত ১১ টা বেজে যায়। 

নামার সময় মেয়েটা কান্নাকাটি শুরু করে দেয়। সে নামতে রাজি না হওয়ায় সুপারভাইজার তাকে জিজ্ঞেস করে যে তার সাথে যাবে কিনা। মেয়েটা রাজি হয়ে তার সাথে তার বাড়িতে চলে আসে।   


সুপারভাইজার সাহেবের দুই মেয়ে একছেলে। ছেলেটা প্রতিবন্ধী। বড় মেয়ে সন্তানসম্ভবা হওয়ায় তার স্ত্রী ব্যস্ত ছিলেন। মেয়েটি সেই বাড়িতে গিয়ে বাড়ির মেয়ের মতো মিশে গেল। রান্নাবান্না ঘরকন্না সবই করছিল। 

বিষয়টা যে থানাতে অবগত করা উচিৎ তা সুপারভাইজার বা তার পরিবারের কারো মাথাতেই আসে নাই। দশদিন পর তাদের কানে পানি যায়। বিষয়টা সজলকে জানালে সজল তাদের নিয়ে আমার অফিসে আসে। 


আমি মেয়েটির সাথে কথা শুরু করলাম। খুবই লাজুক, কথাই বলতে চায় না। কোন রকমে তার মুখ দিয়ে বের করালাম তার নাম, পিতার নাম। তার বাড়ি ময়মনসিংহের আরোংবাজ। সাথে সাথে ওসি কোতোয়ালি ময়মনসিংহের সাথে কথা বললাম। তিনি খুব দৃঢ়তার সাথে বললেন এই নামে ময়মনসিংহ সদরে কোন জায়গা নাই। ফুলবাড়ি ফাড়ির ইনচার্জ আমবারকে বললাম খোঁজ নিতে। সে অনেকদিন সেখানে ছিল। সেও খোঁজখবর নিয়ে বলল এই নামের কোন জায়গা ময়মনসিংহে নাই।  


মেয়েটির সাথে আবার কথা বলা শুরু করলাম। এবার তার কাছ থেকে জানলাম সে একটা মাদ্রাসায় লেখাপড়া করে। মাদ্রাসার নাম নারায়ণডহর। জিজ্ঞাসা করলাম আশেপাশে বড় কোন বাজার আছে। সে বলল পূর্বধলা বাজার আছে। গুগল ম্যাপের সহযোগিতায় নেত্রকোনা জেলার পূর্বধলা থানার পাশে নারায়ণডহর পাওয়া গেল। 

ফোন করলাম ওসি পূর্বধলাকে। খুলে বললাম ঘটনা। তিনি একটু সময় নিলেন। কিছুক্ষণ পর ফোন করে বললেন ১৯ জানুয়ারি একটা মিসিং জিডি হয়েছে। ভিক্টিমের নাম মিলে গেল কিন্তু বাবার নাম মিলল না।  


মেয়েটিকে আবার জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করলাম। এবার আমার সাথে যোগ দিলেন ওসি সদর জনাব এসএম বদিউজ্জামান। দুজনের সম্মিলিত জিজ্ঞাসাবাদে সে বাবার নামের কথা স্বীকার করল, কেন বাড়ি থেকে পালিয়েছে তাও বলল। আবার ফোন করলাম ওসি পূর্বধলাকে। জানালাম সবকিছু। তিনি মেয়েটির বাড়িতে খবর দিলেন। 


২৭ তারিখ সন্ধ্যায় মেয়েটির বাবা তার সাথে দুইজন লোক নিয়ে থানায় এসে হাজির। বাবা মেয়ের মিলন হলো, সৃষ্টি হলো এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের। বাবার সাথে কথা বলে জানা যায় তিনি গাজীপুরে একটা ছোট চায়ের দোকান চালান, তার স্ত্রী গার্মেন্টসে কাজ করে। মেয়েটা তার দাদার সাথে গ্রামের বাড়ি লাউজানা, পূর্বধলায় থাকে।

 দাদা বকা দেয়ায় সে অভিমান করে মা বাবার সাথে দেখা করার উদ্দেশ্যে বের হয়ে ভুল করে বগুড়ার গাড়িতে উঠে পড়ে। বাবার ভাষ্য অনুযায়ী মেয়েটা হারানোর পর থেকে তাদের বাড়িতে রান্নাবান্না বন্ধ হয়ে মানবেতর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল। 


(ছবিতে মেয়েটিকে তার বাবার সাথে এবং আমার সাথে দেখা দেখা যাচ্ছে, বাবা মেয়ের অনুমতি নিয়ে তাদের ছবি প্রকাশ করা হলো)

2 comments:

  1. Sundori meye dekhe, felsi tulso...

    ReplyDelete
    Replies
    1. মন মানসিকতা পরিবর্তন আনা উচিত। ভালো কাজের প্রশংসা করতে হয়। ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য।

      Delete