পনের বছর আগে (২০০৩) প্রথম মালয়েশিয়া গিয়ে প্লাস্টিক ফ্যাক্টরিতে কাজ করতাম। সাথে কাজ করতো মালয়েশিয়ান ছেলে মেয়েরাও। কাজের ফাঁকে ফাঁকে গল্পে আলাপে কত কথা হতো। হাজারো কথার ভিড়ে জাতীয় পরিচয়পত্রের কথাও ওঠে আসত মাঝেমাঝে।
স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র পেয়েছি |
আমাদের জাতীয় পরিচয়পত্র নেই বলে ওরাই প্রসঙ্গটা উঠাত। কারণ, ওরা ইতিমধ্যে জেনে গেছে আমাদের কোনো আইসি (জাতীয় পরিচয়পত্র কার্ড) নেই। তাদের আইসি আছে, ইন্দোনেশিয়ানদের আইসি আছে। শুধু আছে তা নয়, সে দেশের সব নাগরিকদের অবশ্যই আইডি কার্ডটি সব সময় বহন করতে হয়। আমরা বিদেশিরা যেমন সে দেশে পথেঘাটে চলতে পাসপোর্ট বহন করি। দেশে আমাদের কোনো নাগরিক পরিচয়পত্র নেই এ জন্য ওরা আমাদের লজ্জা দিতে। আমাদের
কোনো নাগরিক পরিচয়পত্র নেই সেটা বলাবলি করে ওরা হাসতো।
কোনো নাগরিক পরিচয়পত্র নেই সেটা বলাবলি করে ওরা হাসতো।
আমাদের আইসি (আইডেন্টিটি কার্ডকে মালয়েশিয়ানরা সংক্ষেপে 'আইসি' বলেন ) থাকবে দূরের কথা মালয়েশিয়া যাওয়ার পূর্বে নাগরিকদের সার্বক্ষণিক পরিচয়পত্র হিসেবে এমন কোনো কার্ড থাকতে পারে তা ধারণায়ও ছিলো না। আমরা সেটার প্রয়োজনও বোধ করি নি। কিন্তু, মালয়েশিয়ায় সেই তখন থেকেই দেখেছি আইসি'র সার্বক্ষণিক ব্যবহার। ব্যাংক, বীমা, স্কুল-কলেজ, হাসপাতাল, থানা, সরকারি-বেসরকারি যে কোনো দপ্তরে, এমনি পথে-ঘাটে পুলিশ চার্জ করলেই আইসি দেখাতে হয় মালয়েশিয়ানদের ;
শুধু ভোট দেওয়ার জন্য আইসি বা আইডি কার্ড নয়। যেমন, মালয়েশিয়ায় আপনি বাসে চড়ে কোথাও যাচ্ছেন, পথে হঠাৎ পুলিশ বাস থামিয়ে সব যাত্রীর পরিচয়পত্র চায়লো; তখন একজন বিদেশি নাগরিকের যেমন পাসপোর্ট ভিসা দেখাতে হবে তেমনি মালয়েশিয়ান হলে তাকেও জাতীয় পরিচয়পত্র দেখাতে হবে। শুধু মুখে বললেই হবে না 'আমি মালয়েশিয়ান'। দেখাতে হবে পরিচয়পত্র।
প্রায় পাঁচ বছর পর ২০০৮ সালের মার্চে মালয়েশিয়া থেকে প্রথমবার দেশে ফিরে আমিও পেয়ে গেলাম সেই বহুল প্রত্যাশিত জাতীয় পরিচয়পত্র। আগে মালয়েশিয়ায়ও ছিলো প্লাস্টিকে লেমেনিটিং করা কার্ড। ২০০৫/২০০৬ সালের দিকে লেমেনিটিং করা কার্ডের বদলে মালয়েশিয়ার নাগরিকরা পায় মেশিনরিডেবল স্মার্ট কার্ড ; যেটা আজ ২২ জুলাই ২০১৮ সালে এসে আমার দেশে আমিও পেয়েছি। এ জন্য ধন্যবাদ জানাই সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে। দেশের সার্বিক জাতীয় নিরাপত্তার জন্য এই স্মার্ট কার্ডের গুরুত্ব অপরিসীম। তবে আমাদের দেশে জাতীয় পরিচয়পত্রের ব্যবহার এখনও অনেক কম।
পরিচয়পত্রের গুরুত্বও সর্বস্তরের নাগরিক বুঝে ওঠেনি। ঘর থেকে বের হলেই জাতীয় পরিচয়পত্র যা এখন আমরা স্মার্ট কার্ড বলছি, সেটা সাথে নিয়েই বের হতে হবে। সেটা আপনি হাটেবাজারে যান, থানায় যান আর ডাক্তারখানায় যান, বা কোনো দপ্তরে যান। সে অভ্যাস গড়ে তোলা একটু সময়ের ব্যাপার হবে আমাদের দেশে।
এ জন্য দেশের সকল নাগরিকদের জাতীয় পরিচয়পত্র বহনের গুরুত্ব বোঝার উদ্যোগ নিতে হবে। স্মার্ট কার্ড হাতে পেয়ে এতো কথা বলাতে কেউ কেউ বলতে পারেন, "এই কার্ড ধুঁয়ে পানি খেলে কী পেট ভরবে"! উত্তর: পেট ভরবে না। কিন্তু, বর্তমান সময়ের এই স্মার্ট দুনিয়ায় একটা স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র তো থাকতে হয়।
আপনি না হলেও, আপনার ভাই, বন্ধু বা কোনো আত্মীয় পৃথিবীর কোনো না কোনো দেশে গিয়ে বলবে, 'হ্যাঁ, আমাদের দেশেও স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র আছে'। -রফিক আহমদ খান।
No comments:
Post a Comment