বগুড়া শহরের কাটনারপাড়ার রহিম
ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপের মালিক আমির হোসেন এক অসাধারণ প্রতিভাবান
ব্যক্তি। এর আগে তিনি বিভিন্ন যন্ত্রপাতি তৈরি করে দেশজুড়ে আলোচনার
কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছিলেন। আবারও দেশে ঝড় তুলতে যাচ্ছেন।
জ্বালানিবিহীন গাড়ি, অটোব্রিকস মেশিন, ধানকাটা মেশিন, অটো জৈব ও
মিশ্র সার মেশিন, ফিশ ফিড ও পোলট্রি ফিড মেশিন, পাট প্রক্রিয়া জাতকরণ
মেশিন, পাম প্রসেসিং মেশিনের পর এবার তৈরি করলেন ‘স্লো মোশন টাইম মেশিন’।
ঠিক কিভাবে কাজ করবে টাইম মেশিন-
এমন প্রশ্নে আমির হোসেন জানান, যন্ত্রটি সূর্য থেকে তাপরশ্মি শোষণ করে সেটি
মানুষের শরীরের অঙ্গপ্রতঙ্গ সচল রাখার জন্য স্নায়ুর ভেতরে নতুন রক্তের সেল
তৈরি করে। এর ফলে দেহের নির্জীব কোষগুলো সজীব হয়।
তিনি জানান, এই যন্ত্রটি সবচেয়ে বেশি কাজে লাগবে বয়োঃবৃদ্ধদের। বয়স হলে
শরীরের অনেক কোষ মরে যায়। চিকিৎসা শাস্ত্রে এসব ব্যক্তির কোষ সজীব করার
কোনো পদ্ধতি
এখন পর্যন্ত উদ্ভাবন হয়নি। কারো মৃত্যুর আগে চিকিৎসকেরা শুধু
অনুমানের ওপর চিকিৎসা দিয়ে থাকেন।
আমির হোসেনের মায়ের মৃত্যুর আগেও এমনটি হয়েছে। সে থেকেই তিনি এমন যন্ত্র
নিয়ে চিন্তা শুরু করেন। চিকিৎসকের কথামতো তিনি জানতে পারেন, মানবদেহে সব
সময় একই ধরনের তাপশক্তি প্রয়োজন। এই তাপশক্তি যখন নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়, তখন
কোনো ওষুধ কাজ করে না। সব স্নায়ুর ভেতরে রক্ত চলাচলের সূক্ষ্মতম গতিও
নিষ্ক্রিয় হয়ে এক পর্যায়ে বন্ধ হয়ে যায়।
দেহের প্রতিটি কোষের একটি নির্দিষ্ট আয়ু আছে। আয়ুষ্কাল পার হয়ে গেলে
কোষটি মরে যায় এবং সেখানে নতুন কোষ প্রতিস্থাপিত হয়। কোনো প্রাণকে
আকস্মিকভাবে স্বাভাবিক অবস্থা থেকে অত্যন্ত নিম্ন তাপমাত্রায় পৌঁছে দেওয়া
হলে মুহূর্তে প্রাণের যাবতীয় কর্মকাণ্ড থেমে যাবে। তখন আক্ষরিক অর্থে তাকে
মৃত বলা হয়।
এ ধরনের সদ্য তাপ নিষ্ক্রিয় দেহকে আমির হোসেনের স্লো মোশান টাইম মেশিনের
তাপরশ্মি নিয়ন্ত্রিত চিকিৎসা পদ্ধতির মাধ্যমে সজীব করা সম্ভব।
আমির হোসেন জানান, তাপরশ্মি চিকিৎসা পদ্ধতি থাকলে তার মা হয়তো সুস্থ
হতেন। এরপর থেকে তিনি সিদ্ধান্ত নেন কিভাবে মানব রক্ত কোষগুলোকে সজীব করে
সুস্থ করে তুলে মানবজাতির সেবা করা যায়। দীর্ঘ ৯ বছরের গবেষণায় তিনি
চিকিৎসা শাস্ত্রের আড়ালেই এই চিকিৎসা পদ্ধতি উদ্বাবন করেন।
তিনি জানান, পৃথিবীতে এমন কিছু ব্যাকটেরিয়া পাওয়া গেছে, যারা ভূপৃষ্ঠের
অনেক নিচে আলো ও অক্সিজেনবিহীন অঞ্চলে দিব্যি বেঁচে আছে। এরা ভূগর্ভের
তাপরশ্মিকে কাজে লাগায়। জীব কোষের শরীরের ভেতরের জটিলতা বাইরের থেকে বেশি।
বাইরের তাপমাত্রা যদি খুব কমে যায়, তাহলে জীবকোষ থেকে প্রচুর তাপ বাইরে
বেরিয়ে যায়। প্রতিটি জীবের দেহে গড়ে উঠেছে দেহ ঘড়ি। জীবদেহের বিপাক দৈহিক
তাপমাত্রা, হরমোন মাত্রা, ঘুম আচরণ প্রভৃতি নিয়ন্ত্রণ করে। এ ঘড়ির মাধ্যমে
জীব দেহের শরীর বৃত্তীয় কাজ ও আচরণ নিয়ন্ত্রণ করে।
আমির হোসেনের ভাষ্যে, বৃদ্ধাবস্থায় এক ধরনের চিকিৎসা করে এ অবস্থা এড়ানো
সম্ভব। সাধারণত অল্প বয়সে একটি কোষ বুড়িয়ে গেলেও শরীরে স্বাভাবিক প্রতিরোধ
ব্যবস্থায় নতুন কোষ সৃষ্টি হয়। কিন্তু, বয়সের একটা পর্যায়ে গিয়ে নতুন কোষ
সৃষ্টি বন্ধ হয়ে যায়। তখন দিনে দিনে এক বিশেষ প্রকারের কোষের সংখ্যা বাড়তে
থাকে আর এতেই বৃদ্ধ বয়সের ছাপ পড়া শুরু হয় শরীরে। বেশি বয়সী মানুষের শরীরে
প্রায় ১০ শতাংশ কোষই হচ্ছে এই বিশেষ কোষ। এই কোষের বৃদ্ধি রোধ করার মাধ্যমে
শরীরে বৃদ্ধাবস্থা এড়ানো সম্ভব। এতে মানুষ দীর্ঘদিন বেঁচে থাকার সুযোগ
পাবে।
তিনি জানান, সূর্যরশ্মির মধ্যে এক ধরনের এনজাইম আছে, যা প্রয়োগ করলে কোষ
মারা যাওয়ার প্রক্রিয়া থেমে যাবে। আমির হোসেনের উদ্ভাবিত যন্ত্রের মাধ্যমে
সূর্য থেকে বিশেষ এনজাইম শোষণ করে চিকিৎসা করা সম্ভব। এই শক্তিই নতুন
রক্তের কোষ গঠন করবে ও বিশেষ কোষের বৃদ্ধি রোধ করবে।
আমির হোসেন জানান, এ মেশিনে ২৪ ঘণ্টা বিদ্যুৎ রিজার্ভ থাকবে। যে
ফ্যাক্টরিতে ১০ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ লোড আছে ওই ফ্যাক্টরিতে সাত দিন পর্যন্ত
বিদ্যুৎ রিজার্ভ ধরে রাখার বিশেষ ব্যবস্থা রয়েছে। সূর্য মেঘে ঢাকা কিংবা
কুয়াশায়াচ্ছন্ন থাকলেও এটি ব্যবহারে কোনো অসুবিধা হবে না।
No comments:
Post a Comment