সোনাতলা সংবাদদাতা মোশাররফ হোসেন : যে স্কুলে যাতায়াতের কোনো রাস্তা নেই
সে স্কুলটি বগুড়ার সোনাতলা উপজেলাধীন ‘নামাজখালী সরকারি প্রাইমারী স্কুল
কাম বন্যা আশ্রয় কেন্দ্র’। এছাড়া ওই স্কুলে নেই কোনো খেলার মাঠ। নেই কোনো
বিদ্যুৎ। নেই কোনো বিশুদ্ধ খাবার পানির ব্যবস্থা।
স্কুলটি স্থাপিত ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দে। আবাদি জমির মাঝখানে স্কুলটি। স্কুল থেকে আনুমানিক ১৫০ গজ দক্ষিণ দিকে রয়েছে কাঁচা রাস্তা।
কিন্তু সেখান থেকে স্কুলে যাতায়াতের কোনো রাস্তা নেই। রাস্তা না থাকায় জমির সরু আইল দিয়ে অতি কষ্টে স্কুলে যাতায়াত করে থাকে শিক্ষক,ছাত্র-ছাত্রী,অভিভাবক,শিক্ষা অফিসারসহ অনেকে। কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীরা খরা মৌসুমে হয়তো জমির আইল ও ক্ষেতের মধ্য দিয়ে স্কুলে যাতায়াত করে থাকে। কিন্তু বর্ষা মৌসুমে কাদা ও পিচ্ছিল সরু আইলের ওপর দিয়ে বই-পুস্তক নিয়ে স্কুলে যাতায়াত করতে গিয়ে কতক ছাত্র/ছাত্রী আকস্মিক পড়ে যায়।
ফলে শরীর,পড়নের কাপড় কিংবা বই,খাতাপত্র ও
কলম ইত্যাদি কাদা-পানিতে ভিজে নষ্ট হয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটে। রাস্তা না থাকায়
বর্ষাকালে স্কুলে ছাত্র/ছাত্রীদের উপস্থিতি হয় কম। স্কুলটিতে বিদ্যুতের
জন্য ওয়ারিং করা হয়েছে দীর্ঘদিন ধরে। কিন্তু এখন পর্যন্ত সংযোগ দেয়া হয়নি।
জানিয়েছেন ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক মতিউর রহমান,অন্যান্য শিক্ষক ও
স্থানীয়রা। শিক্ষকরা জানান, স্কুলে স্থাপনকৃত নলকূপের পানি দীর্ঘদিন যাবৎ
আর্সেনিকযুক্ত। তাই নলকূপটির পানি পান করা সম্ভব হয় না।
কোনো বাড়ি থেকে
বালতি কিংবা জগ ভরে পানি এনে ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক কিংবা স্কুলে আসা
অতিথিদেরকে পানি পান করাতে হয়। স্কুলটি বন্যা আশ্রয় কেন্দ্র বিধায় ভবনের
নীচে কোনো শ্রেণি কক্ষ নেই। কক্ষ রয়েছে দ্বিতীয় তলায়। সেখানে পাঠদানের জন্য
রয়েছে মাত্র ৩টি শ্রেণি কক্ষ ও ছোট ১টি অফিস কক্ষ। বর্তমানে স্কুলটিতে
ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে ১৩৩ জন ও শিক্ষক রয়েছে ৪ জন। শ্রেণিকক্ষ স্বল্পতার
কারণে শিশু (প্রাক প্রাথমিক) শ্রেণি হতে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ছয়টি শ্রেণির
ছাত্র/ছাত্রীদেরকে দু’টি শিফ্টে ভাগ করে পাঠদান করা হয়। শ্রেণিকক্ষ বাড়ানো
প্রয়োজন। কিন্তু নতুন ভবন নির্মাণ করার মতো সেখানে কোনো সুযোগ নেই।
প্রধান
শিক্ষক আরো জানান,গত ২/৩ বছর আগে ভূমিকম্পে স্কুল ভবনের দক্ষিণ অংশে ফাঁটল
ধরেছে। বৃষ্টি এলে ফাটল দিয়ে পানি চুঁয়ে পড়ে দক্ষিণ কক্ষে। ভবনটি
২০০৫-২০০৬ অর্থ বছরে নির্মাণ। সোনাতলা সদর ইউপি চেয়ারম্যান মাহবুবুল আলম
বুলু জানান, স্কুলে যাতায়াতের জন্য রাস্তা নির্দ্ধারণ হলেই আমি চেয়ারম্যান
হিসেবে রাস্তায় মাটি কাটার ব্যবস্থা করব। তিনি আরো জানান, ওই স্কুলের সাবেক
সভাপতি আমিরুল ইসলাম সরকার পুনঃ সভাপতি হওয়ার শর্তে জনসন্মুখে রাস্তার
জন্য শিগগির জায়গা/জমি দলিল করে দিতে চেয়েছেন। আমিরুল ইসলাম সরকার
জানান,স্কুল ও স্কুলের দক্ষিণে রাস্তা সংলগ্ন মাঝখানে জমিটি আমার ভাইয়ের।
ভাইয়ের এই জমিটির সাথে আমার অন্য একটি জমির রেওয়াজ দলিল হওয়ার কথা হয়েছে।
দলিলটি হলেই স্কুলের রাস্তার সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে।
উপজেলা শিক্ষা অফিসার
মোঃ জিল্লুর রহমান জানান, নামাজখালী সরকারি প্রাইমারী স্কুলে যাতায়াত করার
মতো কোনো রাস্তা নেই। এটি একটি বড় সমস্যা। ওই এলাকার ইউপি চেয়ারম্যান ও
স্থানীয় জনগণ চেষ্টা করলেই রাস্তার ব্যবস্থা করা সম্ভব। সোনাতলা উপজেলা
পরিষদের চেয়ারম্যান একেএম আহসানুল তৈয়ব জাকির গত দু’মাস পূর্বে উপজেলা
আইন-শৃঙ্খলা ও উপজেলা সমন্বয় কমিটির মাসিক সভায় স্কুলের রাস্তার সমস্যার
কথা তুলে ধরেছেন।
No comments:
Post a Comment